শনিবার, ০৭ Jun ২০২৫, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন
আহসান হাবিব হিমেল, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি:
রাত পোহালেই সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এক আনন্দময় ও ত্যাগের মহিমায় ভাসমান দিন- পবিত্র ঈদুল আজহা। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, সামাজিক সম্প্রীতি ও আত্মত্যাগের গভীর বার্তা নিয়ে আগামীকাল শনিবার (৭ জুন) সারাদেশে একযোগে উদযাপিত হবে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসবটি।
ঈদুল আজহা, যাকে কোরবানির ঈদ বলেও অভিহিত করা হয়, মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এঁর মহান আত্মত্যাগের স্মরণে পালিত হয়। প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে বিশ্বের সকল মুসলিমগণ পশু কোরবানি করে থাকেন, যা আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সাম্যবাদের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত।
পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার প্রতিটি বাজার, হাট ও দোকানে বইছে ব্যতিক্রম এক উৎসবের হাওয়া। কেন্দুয়া পৌর শহরের কাপড়ের দোকান, কসমেটিকস, জুতার শোরুম, শিশুদের খেলনার দোকান কিংবা মাংস কাটার সরঞ্জামের দোকান, সবখানেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। অনেকেই শেষ সময়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য জামা-কাপড় কিংবা ঈদের রান্নার বিশেষ সামগ্রী কিনে নিচ্ছেন।
ঈদুল আজহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কোরবানির পশু। এ উপলক্ষে উপজেলার পৌর সদরের গরুর হাট শুক্রবার (৬ জুন) শেষ বাজার গরু-ছাগল কেনা-বেচার ধুম পড়েছে। আজকের চেয়ে আগের বাজারগুলোতে গরু ছাগলের দাম কম থাকলেও আজকে অনেকটাই বেশি। কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকুল ইসলাম খান বলেন- আজকে একটু আগে একটি ষাঁড় গরু কিনেছি ২ লাখ ৩২ হাজার টাকা দিয়ে তবে, গতকালের চেয়ে আজকে দাম অনেক বেশি। পশু কেনা শেষে অনেকেই বাড়িতে নিয়ে গিয়ে নিজ হাতে গোসল করিয়ে সাজিয়ে রাখছেন। কোরবানির জন্য ক্রয়কৃত পশু দেখে শিশু-কিশোরদের মাঝেও আনন্দ-উল্লাস শুরু করে দিয়েছে।
কেন্দুয়া উপজেলার বিভিন্ন ঈদগাহ মাঠ ইতোমধ্যে ঈদের নামাজের জন্য ধুয়েমুছে প্রস্তুত করা হয়েছে। কেন্দুয়া মডেল মসজিদ, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ, থানা মসজিদ, কেন্দুয়া পৌরসভা ঈদগাহ মাঠ, শেহড়া ঈদগাহ মাঠ সহ আরও অন্যান্য এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে তবে, বৃষ্টি হলে খোলা আকাশের নিচে ঈদের নামাজ আদায় করতে দুর্ভোগে পড়তে হবে আগত মুসল্লীদের।
এদিন ঈদের জামাত শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হবে পশু কোরবানি। পৌর সদর এলাকায় পশু জবাইয়ের জন্য নেই কোন নির্ধারিত স্থান এবং উপজেলা প্রশাসনের কোন নির্দেশনাও নেই। কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি কোন নির্দেশনা।
শিশু-কিশোরদের মাঝে ঈদ মানেই নতুন জামা, সেমাই, মজাদার খাবার আর বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে থেকে কর্মজীবী মানুষ ঈদ করতে বাড়ি ফিরেছেন কেন্দুয়ায়। ঈদের এই মিলনমেলা গ্রামীণ জনপদে এক বিশাল আনন্দঘন আবহ তৈরি করেছে।
ঈদুল আজহা শুধু পশু কোরবানির উৎসব নয়, বরং এটি আত্মত্যাগ, ধৈর্য ও সাম্যের শিক্ষা দেয়। কেন্দুয়া জুড়ে ঈদের এ উৎসব যেন শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও আনন্দময় হয় এই প্রত্যাশা করছেন সকলের। রাত পোহালেই ঈদের নামাজের ধ্বনি ছড়িয়ে পড়বে প্রতিটি মসজিদ ও ঈদগাহে, আর শুরু হবে খুশির ঈদ—ঈদুল আজহা।
কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. সেকুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হাই সেলিম জানান-
ঈদুল আজহা ত্যাগ ও কোরবানির মহিমায় সমুজ্জ্বল এক পবিত্র উৎসব। এই দিন আমাদের আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা ও মানবিকতার শিক্ষা দেয়। আসুন, আমরা ঈদের এই শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করে সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় একসাথে কাজ করি।
পরিবার-পরিজনসহ সবাইকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করুন। মহান আল্লাহ আমাদের কোরবানি কবুল করুন এবং আমাদের জীবনকে সুখ, শান্তি ও কল্যাণে ভরে দিন।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১৫-১২৫২৪৩